পৃষ্ঠাসমূহ

সংবাদ-প্রতিদিন (বাংলাদেশ ও বিশ্ব)

ভোরের কাগজের আলোচনা সভায় বিশিষ্টজনরা : আলোচনাই আদিবাসী সমস্যা সমাধানের একমাত্র উপায়
ভোরের কাগজ : ১০/০৮/২০১২
কাগজ প্রতিবেদক : আলোচনার মাধ্যমে আদিবাসী বিষয়ক সমস্যার সমাধান করার আহŸান জানিয়েছেন বিশিষ্টব্যক্তিরা। আদিবাসীদের মৌলিক অধিকার  সংস্কৃতি রক্ষার বিষয়েও গুরুত্বারোপ করেন তারা। গতকাল বৃহস্পতিবারভোরের কাগজ আয়োজিত পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক সেমিনার ‘উপজাতি/ক্ষুদ্র জাতিসত্তা এবং আদিবাসী ভাবনা :প্রেক্ষিত বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।
আদিবাসী দিবস উপলক্ষে ভোরের কাগজের কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত  সেমিনারে সভাপতিত্ব  সঞ্চালনা করেনসম্পাদক শ্যামল দত্ত। আলোচনায় অংশ নেন কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক গবেষকমেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীকমেজর জেনারেল আব্দুর রশিদসাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বপীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মাহমুদুল হক মান্নাঅধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন পাটোয়ারীব্যারিস্টারমোনতাসির উদ্দিন আহমেদ এবং অধ্যাপক  গবেষক রতনতনু ঘোষ।  সময় ভোরের কাগজের বিজ্ঞাপনব্যবস্থাপক এস এম  রাজ্জাকপ্রশাসনিক কর্মকর্তা সুজন নন্দীসার্কুলেশন ইনচার্জ তসলিম চৌধুরীহিসাব প্রধানআবদুল করিম সোহাগ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেনপার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতিরা নিজেদের আদিবাসী বলেদাবি করছেন। তারা পার্বত্য চট্টগ্রামে নিজেদের অধিকার বলবৎ করতে চান। সেখানে তারা মি অধিকারসহ শাসনব্যবস্থায় অনেকটা নিজেদের অধিকারে রাখার কথা বলছেন। কিন্তু একটি ¯^াধীন-সার্বভৌম দেশে কিভাবে সেটাসম্ভব বলে তিনি প্রশ্ন তোলেন। তিনি পার্বত্য অঞ্চলের আদিবাসীদের থেকে সমতলভমির আদিবাসীদের অবস্থা আরোখারাপ বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেনতারা অশিক্ষা এবং দারিদ্র্যের কারণে পিছিয়ে আছে। আদিবাসীদের দাবিসম্পূর্ণভাবে মেনে নিলে রাষ্ট্র তার সার্বভৌমত্ব হারাতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
মেজর জেনারেল আব্দুর রশিদ বলেন২০০৭ সালের আইএলও কনভেনশনে ¯^াক্ষর করা বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভবছিল না। কেননাপার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের সকল উপজাতি বা নৃগোষ্ঠীকে যদি আদিবাসী হিসেবে ¯^ীকৃতি দিতেহয় তাহলে অনেক অসুবিধার সৃষ্টি হবে। তাছাড়া আইএলও কনভেনশনে যেসব শর্ত আছে তা মেনে নেয়া কোনো¯^াধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের পক্ষে সম্ভব নয়। এর ফলে জাতীয় পর্যায়ে সংকট সৃষ্টি হতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন।আদিবাসী প্রশ্নে তিনি বলেনযারা চিরস্থায়ীভাবে  দেশে বসবাস করছে শুধুই তারাই আদিবাসী হবে। কিন্তু পার্বত্যচট্টগ্রামে চাকমাগারোখাসিয়ানাগা প্রমুখ সবাই উপজাতি। তারা  দেশের আদিবাসী কখনই নয়। সে কারণেতিনি সরকারের  আদিবাসী ¯^ীকৃতি না দেয়ার সিদ্ধান্তকে ¯^াগত জানান। তবে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের জন্য তিনি সরকারের প্রতি আহŸান জানান।
পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেনআদিবাসীদের ‘আদিবাসী’ বলা যাবে কিনা তা বিতর্কিত বিষয়। বর্তমানে  নিয়ে একটিসংকট তৈরি করা হচ্ছে। ব্রিটিশরা  সংকটের স্রষ্টা কিন্তু পাকিস্তান আমলেও  সংকট সৃষ্টি হয়েছে বলে তিনি মন্তব্যকরেন। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজা ত্রিদিপ রায়ের ¯^াধীনতাবিরোধী মিকার কথা উল্লেখ করে বলেনত্রিদিবরায় বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে ¯^ীকার করেন। তিনি নিজেকে ¯^াধীন রাজা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতেচেয়েছিলেন।
তিনি আরো বলেনবর্তমানে আদিবাসী বা উপজাতিদের নিজ¯^ সংস্কৃতিঐতিহ্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তা রক্ষা করাআমাদের দায়িত্ব।
তবে আলোচনার মাধ্যমে  বিতর্কের অবসান সম্ভব বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।
মাহমুদুল হক মান্না বলেনবর্তমানে বাংলাদেশে আদিবাসীউপজাতীনৃগোষ্ঠী ইত্যাদি শব্দ নিয়ে একটি সমস্যা বাবিভ্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের বসবাসরত বাসিন্দারা বিশেষ করে চাকমা উপজাতিরা নিজেদের আদিবাসীহিসেবে ¯^ীকৃতি দাবি করছে। তবে  বছর সরকার আদিবাসী দিবস পালন না করতে প্রজ্ঞাপণ জারি করে তাদেরপ্রতি অন্যায় করেছে।
মমতাজ উদ্দিন পাটোয়ারী তার বক্তব্যে সারা বিশ্বে আদিবাসী দিবস পালিত হচ্ছে বলে জানান। বিশ্বের ৪০ কোটিআদিবাসী অনগ্রসর জাতি হিসেবে পরিচিত। কিন্তু তিনি জাতিসংঘের সিদ্ধান্ত বা আইএলও কনভেনশন সর্বসম্মতনয় বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন২০০৭ সালে জাতিসংঘ ৪৬টি অধিকার কার্যকর করার কথা বলে কনভেনশন সংশোধন করেন যাতে সঙ্গত কারণে বাংলাদেশ ¯^াক্ষর করেনি।
তিনি এসব উপজাতির অর্থনৈতিক দুরবস্থার কথা উল্লেখ করেন এবং তাদের একটি ছাতার নিচে এনে নার্সিং করারদাবি জানান। যাতে তারা সমাজের মূল স্রোতে ফিরতে পারে।
মোনতাসির উদ্দিন আহমেদ বলেনআইএলও কনভেনশন ২০০৭- যা বলা হয়েছে তা আমাদের সংবিধানের সঙ্গেসাংঘর্ষিক। পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তির বিষয়ে কিছু সমস্যার কথা তিনি তুলে ধরেন। তিনি বলেনবর্তমানেচাকমাদের তুলনায় অন্য উপজাতিরা অনগ্রসর। তাদের জন্য সরকার কিছু উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারেকিন্তু তাদের জন্য সংরক্ষণ ব্যবস্থা গ্রহণ করা ঠিক হবে না। এতে তাদের অসম্মান করা হবে।
রতনতনু ঘোষ বলেনবিশ্বের ৭০টি দেশে ৪০ কোটি মানুষকে নিয়ে আজ আলোচনা চলছে। মায়ানমার থেকেবিতাড়িত হয়ে অনেকে ৩০০ বছর আগে বাংলাদেশে এসে বসবাস করছে। কিন্তু আজকে এরা আদিবাসী হিসেবে¯^ীকৃতি দাবি করছে। কিন্তু যা করা হোক না কেন এদের দেশের সংবিধান মেনে চলতে হবে বলে তিনি মন্তব্যকরেন। তবে শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন করার দাবি জানান তিনি।
শ্যামল দত্ত বলেনবাংলাদেশে সব নৃগোষ্ঠী এক কিনাÑ তা ভেবে দেখা দরকার। এদের আদিবাসী বা নৃগোষ্ঠী বললেকি সমস্যা তাও ভেবে দেখার কথা বলেন তিনি। তবে আদিবাসী বা নৃগোষ্ঠীর সংস্কৃতিভাষাগত এবং নিজ¯^ঐতিহ্যের অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন তিনি। রক্তপাত নয়Ñ আলোচনাই একমাত্র সমাধানেরউপায়। পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন এবং আদিবাসী ¯^ীকৃতির অধিকার আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেসমাধান করার জন্য তিনি সরকার  আদিবাসী নেতাদের প্রতি আহŸান জানান