পৃষ্ঠাসমূহ

স্বার্থপর

রতনতনু ঘোষ

স্বার্থপর

তুমি ছিলে প্রিয়জন শুভাকাক্সক্ষী বন্ধু অনেকের
প্রিয় কথা শোনাতে, অপ্রিয় কাজ এড়াতে।
অন্যের পছন্দ আর আগ্রহের বিষয় জানতে;
ভালোবেসে অন্যের শূন্যতা পূরণ করতে।

এখন নিজে ভালো থাকতে চাও; ভালো খেতে-পরতে চাও;
ভালো করতে চাও না অন্যের; ভালো হতে চাও না নিজে।
অন্যকে বঞ্চিত করে পেতে চাও নিজের সমৃদ্ধি;
অন্যের ক্ষতির বিনিময়েও আত্মস্বার্থ লাভে তৎপর হও।

ক্রমাগত কর্মদোষে অপ্রিয় হয়েছ সবার;
অথচ ছলচাতুরি ছাড়াই ভালো হতে পারতে,
ভালো করতে পারতে অন্যের, এমনকি নিজেরও।

নিজের ত্র“টি আড়াল করে অন্যের দোষ খোঁজো নিরন্তর;
অন্যের যা অপছন্দ তা কর সানন্দে সারাক্ষণ।
পরনিন্দা কর অবিরত; অন্যের অকল্যাণ কর প্রতিনিয়ত
নিজের দোষ লালন করে অন্যকে ঢেকে ফেলো বদনামে।
ভালো হয়ে থাকতে চাও না সুখে ও সুনামে।
নিজেকে অন্যের মধ্যে, অন্যকে নিজের মধ্যে দেখতে চাও না;
কারো দুঃখে-শোকে, দুঃসময়ে সহায়ক হতে পারো না।
অন্যের অনুগ্রহ পেয়েও অন্যকে জ্বালাও নিয়মিত;
চাইলে নিজে ভালো থেকে অন্যেরও ভালো করতে পারো ক্রমাগত।

শিক্ষকপল্লী, মোহাম্মদপুর, ঢাকা; ১২ জুন, ২০১৪

জীবনজয়ী হুমায়ুন আজাদ

রতনতনু ঘোষ

জীবনজয়ী হুমায়ুন আজাদ

অগ্রজ সুন্দরের আকর্ষণে উন্মাতাল হুমায়ুন আজাদ;
তিনি এলেন, প্রথা ভাঙলেন, বিতর্কিত হলেন;
নির্মাণ করলেন জীবনের নতুন তাৎপর্য, রূপ ও রঙ।

মৃত্যুতে তার বিশ্বাস নেই; বিশ্বাস নেই অমরতায়
কিংবা শক্তিমানের আধিপত্যে, ভণ্ডামির উচ্চতায়;
নষ্টদের ভ্রষ্টাচারে উদ্বিগ্ন তিনি, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার;
শ্রদ্ধেয় জ্ঞানপাপীদের, দূষিত বিবেকের দৌরাত্ম্যে দুঃসহ তার
বাংলাদেশ-বাংলাভাষার শত্র“দের প্রতি ঘৃণা তার তীব্র;

মৃত্যুর প্রতি বেপরোয়া তিনি; অমরতায় নেই আস্থা;
পুনর্জন্মে আকাক্সক্ষাহীন; মৃত্যুর পরেও মৃত্যুঞ্জয়ী তিনি।
ধর্মের নামে দখল-খুন ঘৃণা করতেন বেশ;
রাজনীতির নামে সন্ত্রাস, ক্ষমতার নামে দুর্নীতিতে ঘৃণা তার;

আনন্দময় জীবনে, সৌন্দর্যময় সৃজনে, মনুষ্যত্ব বিকাশে তার আস্থা;
বিতর্কে উৎসাহ, জীবনের শিল্প সঞ্চারে আগ্রহ তার।
নিদ্রিত হয়ে যিনি জাগ্রত; বিতর্কিত হয়েও যিনি বরণীয়
তার নাম হুমায়ুন আজাদ জীবনজয়ী ও স্মরণীয়।

১২ মে, ২০১৪, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।

যাদুঘর হয় জাতিঘর

রতনতনু ঘোষ

যাদুঘর হয় জাতিঘর

হে আমার সুখ-দুঃখ ভানাবিলাস তুমি কোথায় হারালে?
বিগত কাল পেরিয়ে বর্তমান ছুঁয়ে ভবিষ্যতে হাত বাড়ালে।
আমাদের ঐতিহ্যের শেকড় বিশাল গভীরে প্রোথিত;
অতীতের বিস্তার অনেকটা পরিপূর্ণ বৈচিত্র্যে মথিত।
ছড়ানো রয়েছে দৃশ্যপট বস্তুরূপ ঘটনার সাক্ষ্য নমুনার স্তূপ
সংরক্ষিত জীবনচিহ্ন ভাবনাভাস্কর্য সুবিন্যস্ত সংস্কৃতির খোদিত রূপ।
সভ্যতার অক্ষত জীবন মননের কারুকাজ যাদুঘর করে প্রদর্শন;
খুঁজি বাংলার ইতিহাস, ফিরে পাই গৌরবময় প্রতœনিদর্শন।
সমকাল পরিসরে কৃষ্টিবন্ধন ব্যাপ্ত জীবনের দীপ্তিময় স্তব;
অভিজ্ঞতায় ফুটেছে সম্পর্কগোলাপ, কমর্মময় জীবনের ঋদ্ধ বাস্তব।
স্মৃতিময় জাদুঘর যখন প্রীতিময় জাতিঘর হয় আমার পাশে
আমি থাকি জাতিসত্তার কাছে, চেতনায় অতীত রোদ হাসে।

১১ মে, ২০১৪। জাতীয় জাদুঘর, শাহবাগ, ঢাকা

অনির্বাণ শিখা চিরন্তন

রতনতনু ঘোষ

অনির্বাণ শিখা চিরন্তন

বাঙালি মুগ্ধচিত্তে স্নিগ্ধ-শান্ত আলোকের শুচিরেখায়
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এ ওকে, সে তাকে শিখা চিরন্তন দেখায়।
মুক্তিযুদ্ধের প্রজ্জ্বলিত চেতনা বাঙালির আত্মসন্ধান নতুন নির্মাণ;
অন্ধকারের বিরুদ্ধে সদাজাগ্রত আলোক সঞ্চারে অবিরত অনির্বাণ।
স্বাধীনতার বিজয়ী চেতনার পদপ্রান্তে অবনত অপশক্তি;
বাঙালির সাহস ও ঐক্যের প্রেরণা শিখা প্রতীকী গণমুক্তি।
অপরাজেয় বাংলাদেশের নিরন্তর জাজ্জ্বল্যমান শিখা চিরন্তন;
যতদিন দুঃশাসন ত্রাসন শোষণ ততদিন বাঙালির মুক্তিতে প্রাণপণ।
স্বাধীনতার অনলপ্রবাহে আমাদের মুক্তিমন্ত্র চিরন্তন;
বাঙালি এগুবে স্বদেশপ্রেমে; বাড়বে শান্তিমন্থন।

৯ মে, ২০১৪। শিখা চিরন্তন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ঢাকা।

মানুষকে করো জয়

রতনতনু ঘোষ

মানুষকে করো জয়

সর্বত্র সন্ত্রাস, সহিংস বিশ্বের যুদ্ধময় রক্তাক্ত প্রান্তরে
মানুষ এসেছে মানুষের পাশে, গিয়েছে লাশের কাতারে।
পরিচর্যার চিরসঙ্গী রেডক্রস তুমি বন্ধু শুশ্র“ষার;
হেনরি ডুনান্ট বিশ্বাসী মানবসম্পর্কে আহত-নিহতের আত্মীয়তার।
মানুষ মাত্রই মানুষের আত্মীয় তবু চলে হানাহানি;
মানুষে মানুষে সম্প্রীতির সংকট, আছে অসাম্য-গ্লানি।
দুর্জনের সাথে দুর্বৃত্তায়নে স্বার্থের সংঘাতে কল্যাণ নেই,
মানবীয় ঐক্যের বন্ধন নেই, শান্তির প্রাচুর্য নেই।
ঝুঁকি নিয়ে রেডক্রসকর্মী এগিয়ে যায় দুর্গতের পাশে
যন্ত্রণাকাতর মৃত্যুমুখীরা চিকিৎসা পায়, সুস্থ হয়ে হাসে।
হত্যার খেলা যুদ্ধের বিভীষিকা রক্তপাত আর নয়;
মানুষ হয়ে সেবকরূপে বিপন্ন মানুষকে করো জয়।

৮ মে, ২০১৪। বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট প্রাঙ্গণ, ঢাকা।

অসুন্দরের শব

অসুন্দরের শব

রতনতনু ঘোষ

অমৃতের পুত্র যারা আছো হাসিমুখ
এসো সরাবে দুর্নীতি দুষণ জজ্ঞাল
বাড়ছে মিথ্যুক বাচাল শুদ্ধিবিমুখ
অন্যায়ে বেপরোয়া আদর্শের কঙ্কাল।

শুকনো অঙ্গীকারের ঘূর্ণি হাওয়া আনে ধোঁয়াশা
তাতে নেই সুখ-স্বস্তি, সুন্দরের ভরসা।
বহুভাবে ব্যাধিগ্রস্ত একপক্ষ চরম
কেবলি আত্মসুখ আর দুর্নীতি পরম।

ক্ষমতার স্বাদ নিয়ে গিলে খায় সাধ সব
তৃষ্ণা আছে তুষ্টি নেই অসুন্দরের শব।

৩ মে, ২০১৪। দুর্নীতি দমন কমিশন চত্বর, সেগুনবাগিচা, ঢাকা।

সুন্দরের আহ্বান

রতনতনু ঘোষ
সুন্দরের আহ্বান

সুন্দরের আহ্বানে এসেছি
কবিতার ম্যাজিক লণ্ঠনে;
কবিতার যাদুতে মুগ্ধ আমি,
ভালো লাগে কবিতার শরীরী সিম্ফনি।

কবিতার আহ্বানে কতদিন গিয়েছি সুদূরে
তবু ছুঁতে পারিনি তাকে।
আজও ভালোবাসিক যাকে
সে আমার স্বপ্নকথা ‘কবিতা’।

১১ এপ্রিল, ২০১৪।
ম্যাজিক লণ্ঠন, কনকর্ড এম্পোরিয়াম, কাঁটাবন, ঢাকা।

জাতিজাগরণ থেকে আত্মজাগরণ

রতনতনু ঘোষ
জাতিজাগরণ থেকে আত্মজাগরণ

পয়লা বৈশাখ আমার প্রিয় বঙ্গাব্দ।
কাল থেকে কালান্তরে এলো ১৪২১ সাল
নিজেকে আবিষ্কার করলাম আত্মজাগরণে।
গণজাগরণের শাহবাগ মঞ্চ বিগত বছরে
ছিল আন্দোলনে উষ্ণ, প্রতিবাদে উত্তাল।
নিবেদিত কর্মীরা দ্বিতীয় একাত্তর এনেছিল।
এমন বৈশাখ জমেনি কখনো;
সারাদেশে বৈপ্লবিক আনন্দের ঝড়ে
যুদ্ধাপরাধীরা অক্টোপাসে আটকে গেল।
সংস্কৃতিকর্মীরা অহিংস আন্দোলনে
শান্তির কপোত উড়িয়ে দিলো।
চারুকলার বৈশাখী উৎসব ছড়িয়ে গেল
সমগ্র ঢাকায়। বাঙালিত্বের পুনর্জাগরণে
আমিও জাগ্রত।
জাতি নববর্ষের এ দিনে উন্মুখ হয়ে আছে গণজাগরণে
উদ্দীপ্ত তারুণ্যের দিকে;
শুভ অর্জনের দৃপ্ত শপথে এগুচ্ছে বাংলাদেশ।

গণজাগরণ মঞ্চ, শাহবাগ, ঢাকা; ১০ এপ্রিল ২০১৪

চেতনায় বাংলাদেশ

রতনতনু ঘোষ
চেতনায় বাংলাদেশ

বাংলাদেশের চেতনাজুড়ে
বৈশাখ আসে আশার ঝড়ো হাওয়ায়,
একুশে ফিরে আসে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা;
নবান্ন পালিত হয় কৃষির স্বনির্ভরতায়।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জাগ্রত জনতা
মানব পতাকায় সুসজ্জিত স্বাধীনতা
কোটি কণ্ঠের জাতীয় সঙ্গীত শুভ ইঙ্গিতময়
বাঙালিরা বাংলাদেশ-বিশ্ব করেছে জয়।
ঐতিহ্যের পরিসরে উচ্চকিত লালন
নিরন্তর প্রেরণা দেন রবীন্দ্র-নজরুল;
বাঙালির ভুবনজুড়ে মহতের লাবণ্য ধরে
সংগ্রামে আর বিশ্বাসের খ্যাতি ঝরে।

চারুকলা, ঢা. বি., ০৫.০৪.২০১৪

কৃষ্ণকলি

iZbZby †Nvl 

কৃষ্ণকলি গান শোনালে
মনের দরজায় একাকী দাঁড়ালে
বললে মনের রূপকথা
ছড়িয়ে রূপময়তা।

মন ছুঁয়েছ মন দিয়ে
তাকিয়ে তবু সুদূরে
কণ্ঠ দিয়ে এলে কানে
বৈশাখের তরঙ্গ-তুফানে।
মন করলে জয়
রবীন্দ্রনাথ অক্ষয়;

গীতল আলোয় ছড়ালে
নিজেকে প্রেমে জড়ালে
প্রেমের ঝলকানি মুখে
তাকিয়ে থাকো আমার চোখে।

বাংলা একাডেমি, ০৪.০৪.২০১৪